কবিতা

জাহানারা পারভীন
ক্ষমার পুকুর ক্রমশ ছোট হয়ে যায়
আহত মাকড়সার সামনে একটি দুপুরকে বহুদিন নতজানু হয়ে
বসে থাকতে দেখেছি। বসার ভঙ্গিটি চরে কুমিরের রোদ পোহানোর
মতো আয়েশি। নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায় এর পেছনেও আছে কোনো
শানে নযুল। মিছিলের দ্রুতগামী পায়ের নখে যতটা প্রাসঙ্গিক ধূলোবালি;
তার মতোই হতে পারে এর মানে। একটি দুপুরকে বহুদিন প্রশ্রয়ে প্রশ্রয়ে
পরিণত হতে দেখেছি বিকেলে। অতঃপর সন্ধ্যায়। রাত্রির কাছে অবশ্য কোনো
ক্ষমা নেই; কেননা আমাদের বনসাই মনে ক্ষমার পুকুর এমশ ছোট হয়ে যায়।

প্রকৃতি পাঠ
এসো, আহত একটি প্রশ্নকে পৌঁছে দিয়ে আসি উত্তরের কাছে।
যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তাদের বলি- বহু ভোর পৌঁছতে
পারে না সন্ধ্যার কাছে। বহুদিন অযথাই এখানে রাতের প্রতিদ্বন্দ্বি।

নির্মিত ভবনের পাশ দিয়ে যেতে যেতে নির্মাণ শ্রমিকেরা এই ভেবে
স্বস্তি পায় - মজুরি পুরিয়ে গেলেও শ্রমের স্বাক্ষর এখনো রয়ে গেছে
প্রতিটি ইটের ভাঁজে ভাঁজে। ডিস্টেম্পার্ড দেয়ালের আড়ালে থাকা
ভবনের লাল ইটেরাও চিনতে পারে তাদের ধাত্রী বাবাদের।

গ্রন্থকীট হয়েও দেখেছি গ্রন্থই নয় সব জ্ঞানের ভা-ার। প্রাক
বসন্তের কচি অশ্বথের পাতারাও বরং এক একটি গ্রন্থ; টিউশন ফি
ছাড়াই পুরো বসন্ত জুড়ে যারা আগ্রহীদের শেখায় লাবণ্যের ধারণা।


আমজাদ সুজন
বিজনেস
দিনের আলো ঢুকে যাচ্ছে তোমার চোখে, এই সঞ্চয়;
রাতের তারায় ঢেলে দিচ্ছ তুমি, এই বিনিয়োগ

ঘড়ি
ঘড়ির সময় লেপ্টে যাচ্ছে দেয়ালে, তোমার ত্বকে।
তুমি লেপ্টে যাচ্ছ ঘুমে। তোমার উড়ন্ত বিছানা থেকে
আমরা শুনছি প্রজ্ঞাদিদির প্রজননের গান।

ধুমশব্দ
ওই যে দূরে নড়ে ওঠছে গাছের ঝুপি তার মধ্যেই ধুমশব্দ!
ধুমশব্দ দুজনের না একার!
দেহ বনাম মনোফুটবল ম্যাচে ধুমশব্দ রেফরিগিরি করে!
ধুমশব্দ বন্ধু-বৌয়ের ওষ্ঠ সেবা করে!
ধুমশব্দ স্মৃতিভ্রষ্ট, ধুমশব্দের টেলিফোন খুব বিজি।

এমরান কবির
রোগী
সেবিকার চোখে ইহকাল জাগে তার। শহরে শহরে গড়ে-ওঠা বৃদ্ধ পিরামিড থেকে চুরি হয়ে যায় বিমানবালিকার চুড়ি। মনোবিজ্ঞান পড়েনি সে, শুধু বিমূর্ত সূচের অগ্রভাগে দেখে নিয়েছে চোখ। এখন অ্যাপ্রেন জাগে না মৃত বালিকার লাশ হয়ে। মনে হয় ব্যবহৃত জোছনা মেখে চলে আসে মিস পূর্ণিমা চ্যাটার্জি।

জোয়ার আসেনি এখনো। দৃশ্যবাদী কাগজ ঢুকে গিয়েছে প্রেসক্রিপশনে। অনন্ত গর্ত হতে বেরিয়ে আসে প্রদত্ত স্বপ্ন, আর স্বপ্নের ভেতরে ক্রীড়াশীল দুটো টিকটিকি

আসুন মহামান্য ফ্রয়েড, সংস্কারের অর্থমূল্যে কিনে নেব সেবিকার হাত, বিমানবালিকার চুড়ি

বিদায় মুহূর্তকে ব্যবচ্ছেদ করে পাওয়া একটি মানচিত্রের আত্মকাহিনী
পালকভরা সূর্যাস্ত দেখে রীতিমতো চিত্রকর হয়ে যায় সে। আড়ালে গোপন কেন্দ্র, বুকের ভেতরে রবিঠাকুরের নাটক। চারশ’ রাত্রির পেটে দূর্গ জেগে ওঠে, ‘কখনো চিঠি লেখ না’র মাঝে লাল নীল উষ্ণতা ফোটে

চোখের মধ্যে প্রহেলিকা, অক্ষয় সনেট। হেঁটে যাওয়া কিংবা বাহনের স্মৃতি নিয়ে চন্দ্রাহত কোরাস। কাঁপে না গোলাপী মদ, নীল পানশালা। পাতায় পাতায় অঙ্গীকার, যেন বৃক্ষের বীজ

যেন বটপাতার মতো দুঃখী গায়িকা। যেন নিকট আত্মীয় জীবন্ত পুস্তকের মতন। চলে যাও, একদিন দেখে যেন পত্রে অধঃপতন

সাগর শর্মা
বাউলপাপী
কতদিন বেসামাল ঘুরেছি
পথে পথে ফুরিয়েছি ফাগুন
তীর্থে তীর্থে কাটিয়েছি বাউলজীবন।

তবু দর্শন পাইনে লালনের-

আহা কতদিন মাড়াইনি পথ মুরশিদের দরবারে

আজ দীর্ঘপথ পেরিয়ে পা ফেলেছি
নগরসড়কে। এবার বুঝি বেশ্যার
দালাল হবো-

এখানে নগর ময়ূরীরা নগদেই লেনদেন
করে এরা বুঝে গেছে শরীর ছাড়া
উপাদেয় বস্তু দ্বিতীয়টি আর নেই।
আহা ঘুড়ি ওড়ানো বালক
নগরের নগ্ননৃত্য খেলা তবু বোঝে না!

লিটলম্যাগ
চৌরঙ্গির চেয়ার-
টেবিলে ঠেস দিয়ে তোলপাড় টোলপড়া
হাসি হাসে
পাশে নাচে
সবুজের স্বৈরাচার

লিটলম্যাগ তুমুল আবেগ
সমূহ সম্ভাবনা বুঝি
হবে না হবে না

আমি নামি জলে
বন্দরে নোঙর তুলে
একাই
ভাসাই
তরী। প্রিয় বুদ্ধদেব স্মরি...


রুদ্র হক
দ্বিতীয় জন্মের আগে
রাত্রির তুমুল আবহে
আমি একটি শহর গড়তে চাই
শহর অথবা গ্রাম অথবা সড়ক
অথবা ঘুমন্ত নগরী অথবা গাঢ় নিস্তব্ধতা
অথবা নিসর্গপ্রিয় মানুষের শরণার্থী ক্যাম্প
লণ্ঠন জ্বালো বলে শহরের প্রতিটা
মোড়ের সাদাপাকা চুলের জয়নাল ভাইদের
জাগিয়ে তুলবো
তারপর শুরু হবে বোধ বেচাকেনার হাট
কবিতার বেশে গণিকারা
কুয়াশার বেশে রাত্রি
অথবা রাত্রির মদ
অথবা সাঁতার...
আমার স্বপ্নাচারিত সকল
চিত্রকল্পের বিনিময়ে
নিজস্ব শুধু নিজস্ব একটি শহর গড়তে চাই
শহর অথবা গ্রাম অথবা সড়ক...

আজিজ কাজল
আমাদের পৃথিবীতে
অতঃপর পাথরের গায়ে
আগুন জ্বালাতে আসা প্রজাপতিরা
দুষ্টগ্রহের পাঠ নিয়ে
ভুলে আছে- রঙিন স্বপ্নছলা;
শুষ্ক পাতায় ফোটালো যাপনের জলপিপি

বিবর্তিত মায়ার কালো আঁচে
ফুলেদের সবুজ আগুন

অরবিন্দ চক্রবর্তী
বিচ্ছেদ-দহন
হাসতাম এবং হাসাতাম
অতপর ব্রিজ চৌচির...

উড়ে যাচ্ছে মৌমাছি...
যে রিসেন্টলি ইয়ে মানে কি যেন চুষে নিয়ে গেল।

পড়ে আছে সব, শবের ধ্যানমগ্নতা নিয়ে
কে আবার কাঁধে তুলে নিচ্ছে ভাঁড়।
অগ্নি আহুতি দানের মন্ত্র জানা আছে কি যাজকের
নইলে আমি একাই চুশব্দে ভাসাব ভাসান।
সমুদ্রের যোনিমূলে ভেসে ভেসে পুষে যাব বিচ্ছেদ দহন।

সিকানদার জহির
বাড়ি ফেরা হয় না
বাড়ি ও নাড়ির সাথে
রাতের বড় সখ্যতা
অথচ রাত ও নদীর সাথে
বড় মাখামাখি আমার
ঘরলক্ষ্মী বলে, এসো তাড়াতাড়ি
রাত করো না
ভুলে যাই রাত ও দিনের হিসেব
শহরের এই ছোট্ট নদী
গিলে খায় আমাতে       ইছামতি।


অতএব মিন্টু
একপশলা বৃষ্টি
একপশলা বৃষ্টি এনে দিলো বসন্ত
কাঠফাঁটা মনে
জলের শব্দে হৃদয় নেচে উঠলো কারণে-অকারণে
নবযৌবন পেলো রুক্ষ অনুভূতি
স্বপ্নচাষের জমিতে ফলবে ফসল

মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নারীর বুকে।